শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপরেই নির্ভর করে আপনার ভালো থাকা। নিয়মিত অনিয়ম এবং পুষ্টিকর খাবার না খেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কীভাবে বাড়াবেন ইমিউনিটি। অনেকের ধারণা করোনাকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারলেই দূরে থাকবে করোনা— এই ধারণা থেকেই কেউ গরম পানি পাতিলেবু মিশিয়ে খাচ্ছেন, কেউ আবার খেতে শুরু করেছেন বাজার চলতি ভিটামিন। কিন্তু এভাবে রাতারাতি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো কি আদৌ সম্ভব।
চিকিৎসকদের মতে, শরীরে শক্তি বাড়াতে যেমন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট দরকার, তেমনই খেয়াল রাখতে হবে যেন খাবারের মধ্যে ভিটামিন ও মিনারেল সম পরিমাণে থাকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কেউ ওষুধ খেতেই পারেন। কিন্তু টাটকা আনাজ, ফল, দুধ খেলে বেশি উপকার হয়। খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে জীবনযাত্রাতেও কিছু নিয়ম মেনে চললে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখা সম্ভব।
প্রতিটি মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার খানিকটা জিনগত, আর বাকিটা কর্মফল। অর্থাৎ এক জন মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার উপরেই নির্ভর করে যে, তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা হবে।
সাধারণত বর্ষাকালে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খানিক কমে যায়। ফলে নানা ধরনের ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়াজনিত অসুখে ভোগেন বহু মানুষ। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে উপায় একটাই। বাড়াতে হবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। না, শুধুমাত্র সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ খেয়ে নয়। শরীরকে ভিতর থেকে শক্তিশালী করে তুলতে বদল আনতে হবে জীবনযাপনে। নিয়মিত শরীর চর্চার পাশাপাশি নজর দিতে হবে দৈনন্দিন ডায়েটেও। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে রোজকার খাবারে যোগ করতে হবে কিছু বিশেষ খাবার।
ড্রাই ফ্রুট
প্রতিদিন সকাল শুরু করুন এক মুঠো ভিজানো আমন্ড ও কিসমিস দিয়ে। সারা রাত আমন্ড ভিজিয়ে রাখলে বাড়ে তাতে মজুত ভিটামিনের গুণ, হজম করাও সুবিধা হয়। দিনের যে কোনও সময়ে খিদে পেলে তিন-চারটি কাজুবাদাম অথবা এক মুঠো চিনে বাদামও খেতে পারেন।
গমের রুটি
সাধারণত প্রত্যেক বাড়িতেই আটার রুটি খাওয়া হয়। গমের আটার পরিবর্তে রাগি শস্যের আটাও খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। রাগির তৈরি লাড্ডুও খেতে পারেন, তবে সেটি ঘি-তে পাক দিলে আরও বেশি পুষ্টিকর হয়ে উঠবে।
আচার বা মোরোব্বা
দুপুর বা রাতের খাবারের সঙ্গে অল্প পরিমাণে আচার বা মোরোব্বা খেতে পারেন। লেবু, আমলকি বা আমের আচার অথবা মোরোব্বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে দোকান থেকে কেনা নয়। তাতে প্রিজারভেটিভ থাকে। চেষ্টা করুন বাড়িতেই আচার বানাতে। পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি শরীরে বাড়বে ভিটামিন বি ১২-এর মাত্রা।
ভাত
রোগা হওয়ার হুজুগে অনেকেই ডায়েট থেকে ভাত বাদ দিয়ে দেন। কিন্তু একটা কথা সব সময়ে মনে রাখবেন। শরীরে ভাতের উপকারিতে কখনও অস্বীকার করা যায় না। ভাতে প্রচুর পরিমাণে ব্রানচড চেইন অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে যা শরীরের পক্ষে খুবই ভালো। এই অ্যাসিড শরীরের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
জায়ফল দেওয়া হলুদ দুধ
এক চামচ জয়ফলগুঁড়া মেশানো এক গ্লাস হলুদ দুধের জুড়ি মেলা ভার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান। ভালো ঘুমেরও ক্ষেত্রেও উপকারী। ভালো ঘুম হলে তবেই না বাড়বে ইমিউনিটি।
এছাড়া ইমিউনিটি বাড়াতে খাদ্য তালিকায় রাখুন ভাত-ডাল-মাছের পাশাপাশি ভিটামিন ও মিনারেলের জন্য প্রতিদিন টাটকা আনাজ, ফল খেতে হবে। ভিটামিন সি-র জন্য যে কোনও ধরনের লেবু বা আমলকি খাওয়া ভাল। খাদ্য তালিকায় দুধ রাখা প্রয়োজন।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন আদা, হলুদ, গোলমরিচ এবং অন্যান্য মশলা। এতে ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। ফুসফুসের সমস্যা এড়াতে গ্যাস-অম্বল না হয়, এমন খাবার খাওয়া উচিত। গলার সমস্যা কমাতে গরম পানি খান। ঘরে তৈরি টক দই খুবই উপকারী।
বদল আনুন জীবনযাত্রায়
এসি চালিয়ে থাকার অভ্যাস বেশি থাকলে মুশকিল। এই অভ্যাস শ্বাসযন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকারক। সিগারেট ও মদ্যপান এড়িয়ে চলাই ভাল। দিনে অন্তত ৬-৮ ঘণ্টার ঘুম দরকার। নিয়ম করে দিনে কয়েক বার গার্গল করতেই হবে। নিয়মিত ব্যায়াম, যোগাসনের মতো শরীরচর্চা করা উচিত। এতে ক্লান্তি দূর হয়ে ভাল ঘুম হবে। মন ভালো রাখার চেষ্টা করন। অবসাদ থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমবে। ফুসফুস ঠিক রাখতে জোরে শ্বাস নিয়ে নাক দিয়ে আস্তে ছাড়তে হবে। এক নিঃশ্বাসে কত সংখ্যা পর্যন্ত গুনতে পারা যাচ্ছে, তা দেখতে হবে। নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ নিয়েই শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা উচিত।